এলপিজি স্টেশনে রিফিল হচ্ছে রান্নায় ব্যবহৃত সিলিন্ডার!
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১৭-০২-২০২৫ ০৪:০৩:২৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৭-০২-২০২৫ ০৪:০৩:২৩ অপরাহ্ন
ছবি: সংগৃহীত
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে গাড়ির জ্বালানি লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ফিলিং স্টেশনে অবৈধভাবে রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার রিফিল করার অভিযোগ উঠেছে। অধিক লাভের আশায় অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ এ ব্যবসায়।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) অরুণ কুমার ঘোষের মালিকানাধীন উপজেলার কদমতলী এলপিজি ফিলিং স্টেশনে যাওয়া একটি অটোরিকশাভর্তি ১৫ বোতল খালি সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার সময় হাতেনাতে স্থানীয়রা আটক করলে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
এলপিজি এবং রান্নার করার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের পার্থক্য না বুঝেই অসাধু বিক্রেতারা এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে ক্রেতাদের ঝুঁকির মুখে ফেলছেন। এতে যে কোনো সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের।
জানা যায়, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কে উপজেলার কদমতলী এলাকায় স্থাপিত কদমতলী এলপিজি ফিলিং স্টেশনে নিয়মিত অবৈধ রিফিলের কাজ চলে। এতে রান্নার কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডারে গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত এলপিজি গোপনে রিফিল করা হয়। নির্ধারিত বাজারমূল্য থেকে খরচ কম হওয়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এবং অসচেতন ভোক্তারা ফিলিং স্টেশন থেকে সিলিন্ডার রিফিল করে রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন।
বিষয়টি ঘাটাইল এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির ডিলারদের নজরে এলে তারা কদমতলী এলপিজি ফিলিং স্টেশনটিকে তাদের নজরদারিতে রাখেন।
রোববার খালি সিলিন্ডারবোঝাই একটি অটোরিকশায় গ্যাস ভরার সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় অটোরিকশাটিকে আটক করেন ডিলাররা। এ সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার অফিস বন্ধ করে দ্রুত সটকে পড়েন এবং ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ করে রাখেন।
পরে ফিলিং স্টেশনটির মালিক অরুণ কুমার ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তিনি বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, বাজারে প্রতিযোগিতা থাকার কারণে ডিলাররা একত্র হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাস বিক্রির ডিলারদের সঙ্গে গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাস ফিলিং স্টেশনের মালিকের প্রতিযোগিতা কীসের- এমন প্রশ্নে অরুন কুমার ঘোষ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। তবে খালি সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার বিষয়টি স্বীকার করে ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। পাম্পের ম্যানেজার ও মালিক জানে।’
জানা যায়, যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতি লিটার ৬৭ টাকা ২১ পয়সা। কিন্তু রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের লিটার ১০৭ টাকার উপরে। এতে ক্রস ফিলিং করতে ১২ লিটারের গ্যাস সিলিন্ডারের জন্য নেওয়া হয় এক হাজার টাকা। অথচ বাজারে ওই পরিমাণ সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ১৪৫০ থেকে ১৫০০ টাকা।
যমুনা গ্যাসের ডিলার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ফিলিং স্টেশনের গ্যাস সিলিন্ডারে ভরা অবৈধ। এতে গ্রাহক প্রতারিত হন এবং বিস্ফোরণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারে অবৈধভাবে গাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাস রিফিল করায় ব্যয় কম হওয়ায় বাড়ছে এর চাহিদা এবং ঝুঁকি। এ বিষয়ে জনগণের আরও সচেতন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিলিন্ডার গ্যাসের আরেক ডিলার রাজিবুল ইসলাম ক্ষোভের সঙ্গে এর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। তাছাড়া তিনি ঝুঁকির বিষয়টি উল্লেখ করে গণসচেতনতা তৈরির দাবিও রাখেন।
টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আকরাম হোসেন জানান, রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজিতে ৭০ শতাংশ কোপেন ও ৩০ শতাংশ ডিউটেন সংমিশ্রণ থাকে। আর গাড়িতে ৬০ শতাংশ কোপেন ও ৪০ শতাংশ ডিউটেন সংমিশ্রণ করে ব্যবহার করতে হয়। কোপেন ও ডিউটেন সংমিশ্রণের পার্থক্য থাকায় এলপিজি গ্যাস কোনোভাবেই রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায় না। রিফিল সংমিশ্রণ সঠিকভাবে না হলে নড়াচড়ার কারণে বিস্ফোরণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স